পাবনা আসছেন মুনমুন সেন,রিয়া সেন,রাইমা সেন

By | 4:19 AM Leave a Comment
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের স্মৃতি বিজড়িত পৈতৃক ভিটে দেখতে দুই কন্যা রাইমা ও রিয়া সেনকে নিয়ে শিগগিরই বাংলাদেশের পাবনায় আসবেন ভারতের তৃণমূল সংসদ সদস্য মুনমুন সেন৷ পাবনায় সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের কর্মকর্তারা জানান, আগামী ডিসেম্বরেই তাদের পাবনায় আসার সম্ভাবনা বেশি। ওই সময় পাবনায় সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র উৎসব হওয়ার কথা রয়েছে।

মায়ের পৈতৃক বাড়ি জামাতের দখলমুক্ত হওয়ার ঘটনায় ১৭ জুলাই দিল্লিতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে মুনমুন বলেছেন, "বাড়িটি উদ্ধার করায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমাদের পরিবারের কৃতজ্ঞ৷ ওই বাড়িতে মায়ের নামে যে সংগ্রহশালা তৈরি হচ্ছে তাতে আমার পাশাপাশি দুই বাংলার সুচিত্রা অনুরাগীরা সবাই খুবই খুশি৷ শুটিং থেকে দুই মেয়ে ফিরলে পাবনায় যাওয়ার দিন ঠিক করব৷ সংগ্রহশালা তৈরি শুরুর আগেই পাবনা যাওয়ার চেষ্টা করবো৷"


কলকাতার সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক কৃষ্ণ কুমার দাস ১৭ জুলাই রাতে মুনমুন সেনে সঙ্গে দেখা করে বাড়ি উদ্ধার এবং পাবনায় সুচিত্রা সংগ্রহশালা সম্পর্কে কথা বলেন। এ সময় মুনমুন সেন তার দুই মেয়েসহ পাবনায় আসার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি পাবনার সংগ্রহশালায় মায়ের কিছু দুর্লভ ছবি এবং ব্যবহৃত সামগ্রী দেওয়ার ইচ্ছা আছে বলে জানান মুনমুন৷ কৃষ্ণ কুমার দাস এর আগে দু'বার পাবনায় এসেছিলেন এবং সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন।

পাবনার গোপালপুর মহল্লায় ১৮ জুলাই সরকারিভাবে সুচিত্রা সেনের পৈতৃক ভিটের দখল নিয়েছে বাংলাদেশের ভূমি রাজস্ব দফতর৷ জমির পরিমাণ মোট ২২.২৫ শতক৷ ওইদিন নিজে হাতে সরকারি বোর্ড দিয়ে তালা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন৷ তিনি বলেন, ’উচ্চ আদালতের রায়ের নির্দেশে আমরা অত্যন্ত সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি সরকারের দখলে নিতে পেরেছি। এর মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হলো। বাড়িটি এখন সম্পূর্ণ দখলমুক্ত। মহানায়িকার স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি আপাতত তালাবন্ধ থাকছে৷ থাকবে পুলিশ প্রহরাও৷ ঈদের পর পাবনার আপামর জনসাধারণকে নিয়ে একটি সভা করে তাদের মতামত নিয়ে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশ‍ালা সরকারের উচ্চমহলকে অবহিত করে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"

৩৩ বছর ধরে বাড়িটি জামায়েতের শাখা সংগঠন ইমাম গাজ্জালির দখলে ছিল৷ শেখ হাসিনা দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বাড়িটি উদ্ধারের জন্য সরকার ও পাবনার সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ লড়াই শুরু করে৷ মহানায়িকার মৃত্যুর পর বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রী ও নাট্যব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর কলকাতায়মুনমুনের সঙ্গে দেখা করে বাড়ি উদ্ধারের বিষয়ে তাকে আশ্বস্ত করেন৷
ঢাকায় ফিরে সংসদে আসাদুজ্জামান নূর ঘোষণা করেন, ওই বাড়িটি উদ্ধার করে সুচিত্রা সেন সংগ্রহশালা হবে৷ মন্ত্রীর ঘোষণার পর বাড়িটি পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলি লাকী এবং সরকারি কমকর্তারা৷

বাড়িটি অবিকৃত রেখে সংগ্রহশালা কীভাবে হবে তা নিয়ে সরকার খসড়া তৈরি করেছে৷ আসাদুজ্জামান নূরের ইচ্ছা- সংগ্রহশালার শিলান্যাস ও উদ্বোধন দুটোতেই থাকুন মুনমুন, রাইমা ও রিয়া৷

বছর দশেক ধরে বাড়িটি উদ্ধারের জন্য লাগাতার লড়াই করেছেন সুচিত্রা সেন সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ রামদুলাল ভৌমিক। তার পাশাপাশি উচ্ছ্বসিত ও খুশি পাবনা গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী-শিক্ষিকারা৷ ওই স্কুলের ছাত্রী ছিলেন মহানায়িকা৷ উদ্ধারের খবরে প্রতিদিনই সুচিত্রা সেনের বাড়িটি দেখতে মানুষের ভিড় বাড়ছে। ডাঃ রাম দুলাল ভৌমিক বলেন, সুচিত্রা সেনের বাড়িটি দখলমুক্ত হওয়ায় আমরা অত্যন্ত খুশি। আমাদের আন্দোলন সফল হয়েছে। এখানে এখন একটি আন্তর্জাতিক মানের সংগ্রহশালা গড়ে তোলার চেষ্টা করা হবে।

১৯৫১ সালের মাঝামঝি সুচিত্রা সেনের বাবা করুনাময় দাসগুপ্ত সপরিবারে পাড়ি জমান কলকাতায়। এরপর এই বাড়িতে সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়। এরপর থেকে বাড়িটিতে সরকারি বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বাস করতেন। পাবনা শহরের গোপালপুর মৌজার এসএ-৯৯ খতিয়ানভূক্ত ৫৮৭-এসএ দাগের ০.২১২৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত সুচিত্রা সেনের এই পৈত্রিক ভিটা ১৯৮৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সাইদুর রহমানের সহযোগিতায় জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুস সোবাহানসহ অন্যান্যরা বাড়িটি ইজারা নেয়। এখানে তারা ইমাম গাজ্জালী ইনস্টিউট নামে কিন্ডারগার্টেন স্কুল গড়ে তোলেন।
সে সময় বাড়িটির মূল্যবান ফলজ ও বনজ বৃক্ষ কেটে ফেলে দখলকারীরা। এরশাদ সরকারের পতনের পর থেকে বাড়িটি দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছিল পাবনাবাসী। একই সঙ্গে বাড়িটিতে সূচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠার দাবি করেন স্থানীয় প্রগতিশীলরা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ১২ জুন পাবনার তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইমাম গাজ্জালি ট্রাস্টকে উচ্ছেদের নোটিশ দেন। ওই বছরের ২২ জুন এ নোটিশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে ইমাম গাজ্জালি ট্রাস্ট। ২০১১ সালে এ রিট খারিজ এবং বাড়িটি দখলমুক্ত করে সেখানে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা স্থাপনের আদেশ দেন উচ্চ আদালত। এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদনের অনুমতি চেয়ে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের করে ইমাম গাজ্জালি ট্রাস্ট। গত ৪ মে এ লিভ টু আপিল খারিজ করে দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে ইমাম গাজ্জালী ইনস্টিটিউট ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক আবিদ হাসান দুলাল জানান, তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধশীল। তাই উচ্চ আদালতের রায় মেনে নিয়ে দখল ছেড়ে দিয়েছেন। 

0 comments:

Post a Comment